নিজস্ব প্রতিবেদক :

পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’ সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্নার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, “কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে” তার স্বামীকে কারাগার থেকে মুক্ত করবেন।

তামান্নার বিতর্কিত বক্তব্য

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তামান্না বলেন, “আমার জামাই গতকাল রাতে অ্যারেস্ট হইছে। মামলা যখন আছে, অ্যারেস্ট হবে। কিন্তু যারা ভাবছেন, সে আর বের হবে না, তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে জামিন করিয়ে আনব।”

তিনি আরও হুমকি দেন, “এখন যারা এই ঘটনা ঘটাইছে, তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমার জামাই আইনি প্রক্রিয়া শেষে বীরের বেশে ফিরবে, তখন খেলা শুরু হবে।”

রিমান্ডে সাজ্জাদ

রোববার (১৬ মার্চ) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালত তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। চান্দগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় পুলিশ ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল।

সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও হত্যা মামলা

সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ডাবল মার্ডারসহ একাধিক হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়ায় প্রকাশ্যে গুলি করে তাহসিন নামে এক যুবককে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী। এছাড়া, গত বছর ২৯ আগস্ট বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে দুইজনকে হত্যা করে সে।

পুলিশকে হুমকি ও পুরস্কার ঘোষণা

গত ২৮ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে হুমকি দেয় সাজ্জাদ। পরে পুলিশ তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে।

সন্ত্রাসের রাজত্ব

চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী এলাকার বাসিন্দারা সাজ্জাদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে আতঙ্কিত ছিলেন। নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলত সে।

কীভাবে পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়ল ছোট সাজ্জাদ?

সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজের নির্দেশনায় দীর্ঘ ৪-৫ মাস ধরে প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে ছোট সাজ্জাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলো পুলিশ। সাজ্জাদ কে ধরার জন্য সিএমপি উত্তর জোনের ডিসি আমিরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একটি টিম ঢাকায় গোপন অভিযান চালান।

পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ইন্টেলিজেন্স টিম সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান শনাক্ত করে, যা ছিল ঢাকার পান্থপথে অবস্থিত আধুনিক শপিং মল বসুন্ধরা সিটি। সিএমপি পুলিশের সাদা পোশাকের একটি দল আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেয়।

সাজ্জাদ যখন ঈদের শপিং করতে শপিংমলের একটি দোকানে প্রবেশ করে, তখনই তাকে গ্রেপ্তার করেন ডিসি আমিরুল ইসলাম। তাকে গ্রেপ্তারের ৩০ মিনিট পর পাশের তেজগাঁও থানায় খবর দেওয়া হলে, সেখান থেকে পুলিশের একটি টিম এসে সাজ্জাদকে থানায় নিয়ে যায়।

তাকে গ্রেপ্তার অভিযানে ডিএমপি, ডিবি না সিএমপি পুলিশ?

চট্টগ্রামের শীর্ষ এই সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ গ্রেপ্তার করার পরে মিডিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা মন্তব্য পাওয়া যায়। কেউ দাবি করেছে ডিএমপি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে, কেউ বলছে ডিএমপি ডিবি পুলিশ কিংবা সিএমপি পুলিশ।

তবে ঘটনাস্থল বসুন্ধরা সিটিতে সাদা পোশাকে চট্টগ্রাম উত্তর জোনের ডিসি আমিরুল ইসলাম কে দেখা যায়। তাতে স্পষ্ট সিএমপি তাকে গ্রেপ্তার করেন। কিন্তু তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন দাবি করেন, তেজগাঁও থানা পুলিশ কতৃক সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হন বলে। হতে পারে সম্প্রতি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে পিপিএম পুরস্কারে নজর কাড়তে এ ধরনের মন্তব্যের মারপ্যাচ।

চট্টগ্রাম নগরীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’ অবশেষে সিএমপি পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। শনিবার (১৫ মার্চ) রাত ৮ টায় রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একটি বিশেষ টিম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিএমপি পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলাম।